শতকের ভয়াবহ সাল ২০২০: উল্লেখযোগ্য ঘটনাবলী

করোনা মহামারির কারণে ২০২০ সাল ইতিহাসের পাতায় থাকবে দুর্দশা আর বিষাদের বছর হিসেবে। কোভিড উনিশের বিস্তার ছাড়াও নানা কারণে এ বছরটি স্মরণীয় হয়ে থাকবে। ২০২০ সালের নানা উল্লেখযোগ্য ঘটনা নিচে তুলে ধরা হলো।

প্রতি বছরের মতো ২০২০ সালের শুরুটাও হয়েছিল নতুন স্বপ্ন নিয়ে। কিন্তু প্রথম মাসের ১১ তারিখে করোনায় প্রথম মৃত্যুর খবর জানায় চীন। মার্চে মহামারি ঘোষণা করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। বিশ্বজুড়ে নেমে আসে ভয়াবহ বিপর্যয়। টিকাদান কার্যক্রম শুরু হলেও বছরের শেষে এসে নতুন ধরনের করোনা সংক্রমণে পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়।
যুক্তরাষ্ট্র

করোনায় বিপর্যস্ত পৃথিবী অনেকটা থমকে থাকলেও থেমে থাকেনি ঘটনা প্রবাহ। এ বছরের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা যুক্তরাষ্ট্রে ক্ষমতার পালাবদল। চার বছর ধরে ক্ষমতায় থাকা ডোনাল্ড ট্রাম্প আর দ্বিতীয় মেয়াদে জয়ী হতে পারেননি। আলোচিত প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প হেরে যান ডেমোক্র্যাট দলীয় জো বাইডেনের কাছে। আর কামালা হ্যারিস মার্কিন ইতিহাসের প্রথম নারী এবং এশিয়ান-আমেরিকান ভাইস প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন।
কৃষ্ণাঙ্গ জর্জ ফ্লয়েডের মৃত্যুতে বর্ণবাদবিরোধী বিপ্লবও এ বছরের অন্যতম আলোচিত ঘটনা। জুনে ফ্লয়েড পুলিশি নির্যাতনে মারা যাওয়ার পর মহামাতেও উত্তাল হয়ে ওঠে যুক্তরাষ্ট্র। বিশ্বের বিভিন্ন দেশেও তার ঢেউ লাগে। এছাড়াও সেপ্টেম্বরে ছড়িয়ে পড়া ক্যালিফোর্নিয়ার ভয়াবহ দাবানলে ক্ষতিগ্রস্ত হয় বহু মানুষ, পুড়ে ছাই হয় লাখ লাখ একর বনাঞ্চল।

অস্ট্রেলিয়া
ভয়াবহ দাবানল ছড়ায় অস্ট্রেলিয়ার নিউ সাউথ ওয়েলস, ভিক্টোরিয়া ও কুইন্সল্যান্ড অঙ্গরাজ্যে। অসহনীয় তাপমাত্রায় দমকা বাতাসে আগুন নেভাতে হিমশিম খেতে হয় দমকলকর্মীদের। সিডনি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, দাবানলে ৫০ কোটিরও বেশি প্রাণি মারা গেছে।

ভারত
বছরের শুরুতে নাগরিকত্ব আইন বাতিলের দাবিতে দিল্লিতে ব্যাপক আন্দোলন হয়। এতে নিহত হন অর্ধশতাধিক মানুষ। এছাড়া বিতর্কিত কৃষি আইন বাতিলের দাবিতে বিক্ষোভে ফুঁসে ওঠেন ভারতের কৃষকরা। রাজধানী দিল্লিসহ বিভিন্ন জায়গায় টানা বিক্ষোভ করেন সাধারণ কৃষকরা। তবে মোদি প্রশাসনের সাথে দফায় দফায় আলোচনার পরও বছরের শেষ দিন পর্যন্ত কোন সমাধান হয়নি।

বৈরুত বিস্ফোরণ
লেবানের বৈরুত বন্দরে বিস্ফোরণে ২শ মানুষ মারা যান, আহত হন হাজারের বেশি। ছয় বছর ধরে বন্দরের কাছে একটি গুদামে প্রায় ২৭শ ৫০ টন অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট মজুদ ছিল।

নাগোরনো কারাবাখ
গত ২৭ শে সেপ্টেম্বর নাগরনো কারাবাখ অঞ্চল নিয়ে সংঘাতে জড়িয়ে পরে আর্মেনিয়া এবং আজারবাইজান। বিতর্কিত এ অঞ্চল নিয়ে শুরু হওয়া যুদ্ধে ৪ হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়। অবশেষে রাশিয়ার মধ্যস্থতায় যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয় দেশ দুটি।

বেলারুশ
গেল আগস্টে বিতর্কিত নির্বাচনের মাধ্যমে লুকাশেঙ্কো ষষ্ঠবারের মত বেলারুশের ক্ষমতায় আসেন। এর পরপরই নির্বাচনে কারচুপি ও পুলিশি নির্যাতনের বিরুদ্ধে বিরুদ্ধে বিক্ষোভে নামেন লাখ লাখ মানুষ। নির্বাচন পরবর্তী বিক্ষোভ থেকে কয়েক হাজার মানুষকে গ্রেফতার করা হয়।

হংকং
হংকংয়ে বিতর্কিত নিরাপত্তা আইন পাস হয়। চীনের পার্লামেন্টে পাস হওয়া নতুন নিরাপত্তা আইন অনুযায়ী কর্তৃপক্ষকে অবমাননা এবং জাতীয় নিরাপত্তা বিপন্নকারীর সর্বোচ্চ সাজা যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের বিধান রাখা হয়। এ আইন কার্যকরের প্রতিবাদে ব্যাপক বিক্ষোভ হয় হংকংয়ে। বেশ কয়েকজন নেতাকর্মীকে আটকও করা হয়।

মধ্যপ্রাচ্য
মধ্যপ্রাচ্যে এ বছর অন্যতম আলোচিত ইস্যু ছিলো ইসরাইলের সঙ্গে সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ কয়েকটি আরব রাষ্ট্রের সম্পর্ক স্বাভাবিক হওয়া। এতে করে ফিলিস্তিনসহ আরব বিশ্বের অন্যান্য অনেক দেশ সমালোচনা করে ঐ দেশগুলোর।
এছাড়াও ইরানের কমান্ডার কাসেম সোলাইমানিকে হত্যাও ছিলো আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। এজন্য যুক্তরাষ্ট্রকে দোষারোপ করে সন্ত্রাসবাদে জড়িত থাকার অভিযোগে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পসহ ৩০ জনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে ইরান। যুক্তরাষ্ট্রও ইরানকে নানা হুমকি ধামকি দেয়।

আফগানিস্তান
২০২০ সালে যুক্তরাষ্ট্র ও আফগানিস্তানে শান্তি চুক্তি হয়। যুদ্ধের প্রায় দুই দশক পর মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের পথ তৈর হয় এ চুক্তির মধ্য দিয়ে।
যুক্তরাজ্য

৩০শে ডিসেম্বর ব্রেক্সিট পরবর্তী বাণিজ্য চুক্তিতে সই করে একে আইনে পরিণত করেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন। বরিস জনসনের এই সইয়ের মধ্য দিয়ে অবসান হলো প্রায় সাড়ে চার বছর ধরে চলা সংকট ও অচলাবস্থার। সেই সঙ্গে, কাটলো ইউরোপীয় রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে বাণিজ্যের ক্ষেত্রে সব ধরনের বাধা। ২০১৬ সালের ২৩শে জুন এক গণভোটে ইইউ ছাড়ার পক্ষে ভোট দেয় ব্রিটেনবাসী।

আরও খবর